Sunday, July 28, 2013

ঈশ্বরের ইচ্ছা এবং ক্ষুধা দর্শন

"তোমাদের কি মন খারাপ ?"

"ঠিক মন খারাপ না, খুব ক্ষিদে লেগেছে।"

"ও আচ্ছা। তোমার সাথে ওটা কে?"

"আমার ছোট ভাই।"

"ও, তা তোমার ছোট ভাইটা খালি গায়ে রাস্তায় শুয়ে আছে কেন?"

"জামা পাবে কোথায় ? তাছাড়া সকাল থেকে তো না খেয়ে আছে। তোমার কাছে কিছু খাবার হবে?"

"তোমাদের তো দেখি খালি খাই খাই স্বভাব।"

"বললাম না খুব ক্ষিদে লেগেছে। আচ্ছা সব মানুষই কি ক্ষিদেয় কষ্ট পায় ?"

"না তা হবে কেন? অনেকের বাড়িতে প্রচুর খাবার থাকে। এত খাবার যে তারা খেয়েও শেষ করতে পারে না। শেষ পর্যন্ত ফেলে দিতে হয়।"

"খাবার ফেলে দিতে হয়?"

"হ্যাঁ, অনেক খাবার বেঁচে যায়, তখন ফেলে দিতে হয়।"

"ফেলে না দিয়ে বরং আমাদের তো দিয়ে দিতে পারে।"

“দিতে চায় না আর কি।আর তাছাড়া তোমাদের খাবার দেয়াও তো একটা ঝামেলার কাজ। এত ঝামেলা কে করতে চায় বল?”

“আচ্ছা তাদের বাড়িতে কত খাবার থাকে ?”

“অনেক অনেক খাবার থাকে। বলে বোঝানো তো মুশকিল।“

“ওদের বাড়িতে কি যত খুশি ভাত খাওয়া যায়?”

“অবশ্যই যায়।“

“বেশি ভাত খেয়ে ফেললে কেউ কিছু বলে না?”

“কেউ কিচ্ছু বলে না। যে কেউ যত খুশি খেতে পারে।“

“আচ্ছা ভাতের সাথে কি ডালও থাকে?”

“শুধু ডাল না, আরও অনেক কিছুই থাকে।“

“আচ্ছা আমি আর আমার ছোট ভাই কি ওদের বাড়িতে গিয়ে একদিন ভাত খেয়ে আসতে পারি?”

“না তা হবে না। দারোয়ান তোমাদের ঢুকতেই দেবে না।“

“এত ভাত, তাহলে আমাদের কিছুটা দিলে অসুবিধা কী?”

“কোন অসুবিধা নেই। দিতে চায় না, তাই দেবে না। প্রশ্নটা সুবিধা অসুবিধার নয়, ইচ্ছা অনিচ্ছার। তোমার কি খুব বেশি ক্ষিদে লেগেছে ?”

“হু। আচ্ছা আমার ছোট ভাইটার কথা বললে কি কিছু ভাত দেবে? ওর বয়স তো খুব কম। মাত্র তিন বছর। এখনও ঠিকমত ক্ষিদে সহ্য করতে পারে না।“

“কারো কথা বলেই কোন লাভ নেই। এক কাজ কর, তোমার ভাইটাকে বেশি করে পানি খাইয়ে দাও। এখন থেকেই ক্ষিদে সহ্য করার অভ্যেস করুক।“

“আচ্ছা ওদের বাড়িতে এত খাবার কেন?”

“এত খুব জটিল প্রশ্ন। তবে সহজ কথায় ধরে নিতে পার এটাই ঈশ্বরের ইচ্ছা। অবশ্য কেউ কেউ সমাজ ব্যবস্থাকেও দায়ী করে।“

“ঈশ্বর চান যে আমরা না খেয়ে থাকি?”

“সম্ভবত তাই।“

“তোমাদের ঈশ্বর এমন কেন?”

“ঈশ্বর তার ইচ্ছেমত চলেন। তিনি কারও কাছে জবাবদিহি করেন না। কারন তার শক্তি সবচেয়ে বেশি।“

"শক্তি বেশি হলে কি সবাই স্বেচ্ছাচারী হয়?"

"তা তো বটেই। শক্তির প্রকাশ ঘটে স্বেচ্ছাচারীতায়।"

"ঈশ্বরের এত শক্তি, তিনি আমাদের খাবার দিতে পারেন না ?"

"চাইলে অবশ্যই পারেন, কিন্তু তিনি দিতে চান না।"

“আমার ছোট ভাইটা অনেকক্ষণ কোন কথা বলছে না। বেশিক্ষণ না খেয়ে থাকলে কি মানুষ মরে যায়?”

"ভয় নেই। তোমার ছোট ভাই মরবে না। ফুটপাতে যারা জন্মায় তাদের জান খুব শক্ত হয়। আর তাছাড়া মরলেও খুব বেশি কিছু যায় আসে না । মৃত্যু খুব সামান্য ব্যাপার। ফুটপাতে জন্মালে কষ্ট সহ্য করতে হয়। কষ্ট সহ্য করতে শেখ। ক্ষিদের কষ্টটাকে উপভোগ করতে শেখ। Have a happy hunger."

No comments:

Post a Comment